ছবি সংগৃহীত
সালমা ফাইয়াজ :কয়লা তার নিজের দেহের ভিতরের হীরাকে যত্ন করে লুকিয়ে রাখে। মাটি ও পাথরের ভেতর লুকিয়ে থাকে সোনা, ঠিক যেমন শুক্তির ভেতরে ঘুমিয়ে থাকে মুক্তা। জঞ্জাল কুড়ুনি রাস্তার জঞ্জাল পরিস্কার করার সময় মাঝে মাঝে কিন্তু অনেক দামী বস্তু খুঁজে পায়, সে কথা কম বেশী আমরা সবাই জানি।
আমি মনে করি, প্রতিটি খারাপ মানুষের ভেতরে একজন দারুণ ভালো মানুষ কোথায় যেন চুপ করে লুকিয়ে থাকে। আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তা দেখেছি।
আমার পুরাতন বনানীর বাড়ির সামনেই থানা ছিল, তখন দেখতাম থানার পুলিশরা সব দুর্ধর্ষ অপরাধীদের ধরে নিয়ে আসতো বিচার করার জন্য বা শাস্তি দিতে। আমি অনেকবার থানায় যেয়ে পুলিশদের অনুমতি নিয়ে সে সব দুর্ধর্ষ অপরাধীদের সঙ্গে কথা বলেছি, মাঝে মাঝে তাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে তাদের মনের গভীরে ডুবুরি হয়ে ঢুকেছি। এদের মধ্যে কিন্তু খুনি, ডাকাত, চোর, জালিয়াত পকেটমার এবং যৌন কর্মী ছিল। এরকম শ’খানেক অপরাধীর সাক্ষাৎকার আমি নিয়েছিলাম।
তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছিলাম, জন্মসূত্রে অথবা পরিবেশগত কারণে অনেকের মধ্যে খারাপ হওয়ার প্রবণতা হয়তো তীব্র হয়ে উঠতে পারে, তবে কোনো মানুষই খারাপ হয়ে চিরজীবন কাটাতে চায় না। তার ভেতরকার ভালো মানুষটা বার বার বের হয়ে আসতে চায়, তার অন্তরের চাপা মূল্যবোধ শুধু অনুকূল বাতাসের অপেক্ষায় থাকে। সেই বাতাস হলো- ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং সুযোগ। আমাদের তথাকথিত সমাজ কিন্তু কিছুতেই সেই দক্ষিণের জানালা তার জন্য খুলে দেয় না বা খুলে দিতে সাহায্য করে না!
প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু ফেরেশতা লুকিয়ে থাকে অথচ সে মানুষটা নিজেই সেটা জানে না বা সেই লুকিয়ে থাকা ফেরেশতাকে দেখতে পায় না। সে নিজের স্বচ্ছ অন্তরকে দেখতে পায় না বলেই জীবন এবং সমাজের কাছে আত্মসমর্পণ করে বা হেরে যায়।
নিজের এবং সমাজের সঙ্গে লড়াই করতে পারে না বলে একদিন সে সত্যি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পরে। তারপর সকলকে না জানিয়ে তার ভেতরের সে ভালো মানুষটা নিজের অজান্তেই অসহায় হয়ে একদিন মৃত্যুবরণ করে।
লেখক: বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী।
সূএ: বাাংলাদেশ প্রতিদিন